TMD: সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন এবং হিন্দুদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক প্রচারনা।

TMD: সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন এবং হিন্দুদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক প্রচারনা।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর চলমান নিপীড়নের মধ্যে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে হিন্দুদের বিরুদ্ধে চরমপন্থীদের আক্রমণাত্মক প্রচারনা চালানোর প্রবণতা বেড়েই চলেছে। সাম্প্রতিককালে, ফেসবুক এবং এক্স (পূর্বে টুইটার নামে পরিচিত) প্ল্যাটফর্মগুলোতে ‘TMD‘ বা ‘টোটাল মালাউন ডেথ‘ নামে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে হিন্দুদের সম্পূর্ণ ধ্বংসের আহ্বান জানানো হয়েছে। এখানে ‘মালাউন‘ শব্দটি একটি অবমাননাকর এবং ধর্মীয় বিদ্বেষপূর্ণ টার্ম যা হিন্দুদের অপমান করতে ব্যবহৃত হয়।

বাংলাদেশে আগস্ট মাসে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে। সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ‘টিএমডি‘ হ্যাশট্যাগটি ব্যবহার করে ইতোমধ্যে দুই লক্ষাধিক পোস্ট করা হয়েছে। এটি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে চরমপন্থী মনোভাব উসকে দিচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্বেষ (TMD) প্রচার

শুধু ফেসবুক নয়, চরমপন্থীরা মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্ম এক্সকেও ব্যবহার করছে তাদের মতাদর্শ প্রচারের জন্য। #TMD হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে তারা একত্রিত হচ্ছে এবং সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার জন্য উস্কানি দিচ্ছে। অতীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো চরমপন্থী কার্যকলাপের জন্য কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে, এবং বর্তমানে এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে ধর্মীয় বিদ্বেষ আরও বেড়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্রমবর্ধমান হুমকির পাশাপাশি মাঠপর্যায়েও সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের ঘটনা বাড়ছে। অনেকে বাংলাদেশের অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ ইউনুসকে এই আক্রমণগুলো বন্ধ করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানালেও, সরকার এ বিষয়ে কার্যত নিষ্ক্রিয়। ইসলামপন্থীদের সমর্থনে পরিচালিত এই সরকার সংখ্যালঘুদের সমস্যা উপেক্ষা করছে, যা তাদের দুর্ভোগকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

সম্প্রতি, প্রখ্যাত হিন্দু নেতা এবং ইসকনের মহারাজ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের ঘটনাও পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে। ইসকনকে আদালতে একটি ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠন বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের হিন্দুদের প্রতি সরকারের নেতিবাচক মনোভাবকে স্পষ্ট করে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার প্রচেষ্টাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

সংখ্যালঘুদের উপর চলমান নিপীড়ন

শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশে হিন্দুদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মন্দির এবং বাড়িঘর বারবার আক্রমণের শিকার হচ্ছে। চরমপন্থীরা দেশে অমুসলিম সংখ্যালঘুদের উপস্থিতি নির্মূল করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এই ঘটনার একটি উদাহরণ হলো রংপুরের মহিগঞ্জ কলেজ মাঠে হিন্দুদের ওপর হামলা। একটি প্রতিবাদ মিছিলে অংশগ্রহণের সময় তারা চরমপন্থী জনতার আক্রমণের শিকার হয়।

ইসলামপন্থীদের সন্তুষ্ট করার জন্য সরকার উগ্রপন্থী সংগঠনগুলোর প্রতি নমনীয় আচরণ করছে। এর একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো আল-কায়েদা দ্বারা অনুপ্রাণিত সন্ত্রাসী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসিমুদ্দিন রাহমানিকে মুক্তি দেওয়া। এ ধরনের পদক্ষেপ সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা হ্রাস করেছে এবং চরমপন্থীদের আরও সাহস জুগিয়েছে।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিংসতা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চরমপন্থী প্রচারণা দেশের জন্য একটি গুরুতর হুমকি হয়ে উঠেছে। সরকার যদি এই সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ না নেয়, তবে সংখ্যালঘুদের ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠবে। ধর্মীয় সহিংসতা বন্ধ করতে এবং সামাজিক ঐক্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাহায্য প্রয়োজন। শান্তি ও সাম্যের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য। সূত্রঃ opindia.com.

Leave a Comment