বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন বছরের পর বছর ধরে চলমান। সেই নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে হিন্দু যুবকদের মিথ্যা ধর্ম অবমাননার অভিযোগে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। এই অভিযোগের ফলে অনেক নির্দোষ যুবক গ্রেপ্তার হচ্ছেন। সম্প্রতি, এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলায়। গত ১৮ই নভেম্বর, ধর্মপাশা থানায় কয়েকজন ইসলামপন্থী উপস্থিত হয়ে আকাশ সিংহ নামে এক হিন্দু যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, আকাশ সিংহ ইসলাম এবং সেই ধর্মের নবী সম্পর্কে আপত্তিকর কথা লিখেছেন। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে পুলিশ দ্রুত তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করে।
বাংলাদেশে হিন্দু যুবকের বিরুদ্ধে মিথ্যা ব্লাসফেমি অভিযোগ ২০২৪
গ্রেপ্তার হওয়া আকাশ সিংহ ধর্মপাশা উপজেলার বাসিন্দা। স্থানীয় মানুষদের মতে, আকাশ একজন সাধারণ যুবক। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন।
হিন্দু অ্যাক্টিভিস্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। তাদের দাবি, কোনো অজানা ব্যক্তি আকাশের নামে একটি ফেসবুক প্রোফাইল তৈরি করে সেখানে ইসলাম সম্পর্কে আপত্তিকর পোস্ট দেয়। এই পোস্ট দেখে ইসলামপন্থীদের একাংশ ক্ষুব্ধ হয় এবং আকাশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে।
হিন্দু নেতারা বলছেন, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে হয়রানি করার একটি সাধারণ অস্ত্র হয়ে উঠেছে। এই ধরনের অভিযোগ নতুন নয়। শেখ হাসিনার সরকার কিংবা বর্তমান ইউনুস-নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, উভয় সময়েই হিন্দু সম্প্রদায়ের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি।
হিন্দু ভয়েস আকাশের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সফল হয়নি। তবে স্থানীয়রা বলছেন, আকাশের পরিবার চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। তাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই। ফেসবুকে মিথ্যা পোস্টের মাধ্যমে মুসলিম জনতাকে উসকে দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের ঘটনার পেছনে যারা রয়েছে, তারা দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করতে চায়। এই ষড়যন্ত্রের ফলে হিন্দু সম্প্রদায় ক্রমাগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের অবস্থা
হিন্দু সংখ্যালঘুদের জন্য বাংলাদেশে নিরাপত্তার অভাব দীর্ঘদিনের। মিথ্যা অভিযোগ এনে হিন্দুদের লক্ষ্যবস্তু করার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও বারবার এই সমস্যার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। যারা মিথ্যা অভিযোগ করে সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। পাশাপাশি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি। আকাশ সিংহের ঘটনা শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির ওপর নির্যাতনের উদাহরণ নয়; এটি বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর চলমান নিপীড়নের আরেকটি অধ্যায়। এই ধরনের ঘটনা বন্ধ করতে সবার সচেতনতা এবং দৃঢ় পদক্ষেপ প্রয়োজন। ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।