সংখ্যালঘু ঐক্য ও বিভক্তি দূরীকরণে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুর বার্তা।

সংখ্যালঘু ঐক্য ও বিভক্তি দূরীকরণে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুর বার্তা

সংখ্যালঘু ঐক্য ও বিভক্তি দূরীকরণে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুর বার্তা দিয়েছেন। রংপুরে সম্প্রতি এক সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের সমাবেশে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভু যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সনাতনী সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন আশার আলো জ্বালিয়েছে। তিনি বলেছেন, “সনাতনীদের বিভক্ত করে রাখা হয়েছে। হয় আওয়ামী লীগ, না হয় বিএনপি, না হয় জাতীয় পার্টি। বিভিন্ন দলীয় তকমায় বিভক্ত করে রাখা হয়েছে। দালালদেরকে আমরা সাবধান করে দিতে চাই, ঐক্যের সুবাতাস বইছে। এখানে কেউ বিভক্ত করতে চাইলে সে যেই হোক তাকে আমরা ছুড়ে ফেলবো।” এই বক্তব্য শুধু এক অঞ্চলের কথা নয়, এটি সারা দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মনের কথা।

বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বহুদিন ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর বিভক্তির শিকার। এই বিভক্তি শুধু রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়েছে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভু এ কথাটিই তুলে ধরেছেন। সনাতনী সম্প্রদায় কখনো আওয়ামী লীগের দিকে ঝুঁকে থাকে, কখনো বিএনপি বা জাতীয় পার্টির দিকে। এতে তাদের মধ্যে একতা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।

এই বিভক্তির কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে পিছিয়ে পড়েছে। বড় রাজনৈতিক দলগুলো প্রায়শই সংখ্যালঘুদের ভোটব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করে, কিন্তু তাদের উন্নয়নের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়। এক দলের সমর্থক অন্য দলের সমর্থকদের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে, ফলে তাদের ঐক্য ভেঙে যায়।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুর বক্তব্যের তাৎপর্য

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুর বক্তব্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে—সংখ্যালঘুদের ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, সনাতনী সম্প্রদায় যদি ঐক্যবদ্ধ না হয়, তবে তাদের অধিকার রক্ষা করা সম্ভব হবে না। এই ঐক্য শুধু রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও প্রয়োজন।

তাঁর কথায় ছিলো দৃঢ়তা এবং আশাবাদ। তিনি বলেছেন, “ঐক্যের সুবাতাস বইছে,” যা সনাতনী সম্প্রদায়ের জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা। এটি বোঝায় যে, মানুষ এখন বিভক্তি থেকে মুক্ত হয়ে একত্রিত হওয়ার চেষ্টা করছে।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভু তাঁর বক্তব্যে “দালাল” শব্দটি ব্যবহার করেছেন, যা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। এখানে তিনি মূলত সেই ব্যক্তিদের কথা বলেছেন, যারা নিজেদের স্বার্থে সনাতনী সম্প্রদায়কে বিভক্ত করে রাখে। এরা রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত লাভের জন্য অন্যদের বিভ্রান্ত করে। তিনি স্পষ্টতই বলেছেন, যারা ঐক্য নষ্ট করতে চায়, তাদের দমন করা হবে।

এই হুঁশিয়ারি একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করে। এটি শুধুমাত্র দালালদের জন্য নয়, বরং সাধারণ মানুষের মধ্যেও সতর্কবার্তা পৌঁছে দেয়—যদি কেউ ঐক্য নষ্টের চেষ্টা করে, তবে তাকে প্রতিহত করা হবে।

বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এখনও অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সম্পত্তি দখল, ধর্মীয় সহিংসতা, এবং সামাজিক বৈষম্যের মতো সমস্যা তাদের প্রতিনিয়ত মোকাবিলা করতে হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি নির্ভরশীল হওয়ার ফলে তারা নিজেদের শক্তি ও সম্ভাবনা হারিয়ে ফেলছে।

এছাড়া, সংখ্যালঘুদের মধ্যে নিজেদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষা করার ব্যাপারেও সচেতনতা কম। রাজনীতির নামে বিভক্ত হয়ে তারা নিজেদের শক্তি ক্ষয় করছে।

সংখ্যালঘু সনাতনীদের ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুর বক্তব্য আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, ঐক্যই শক্তি। যদি সনাতনী সম্প্রদায় একত্রিত হয়, তবে তারা নিজেদের অধিকার রক্ষায় আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।

এই ঐক্য অর্জনের জন্য প্রয়োজন সচেতনতা, শিক্ষা, এবং পারস্পরিক সহযোগিতা। নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে গেলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কেবল নিজেদের জন্য নয়, গোটা দেশের উন্নয়নেও অবদান রাখতে পারবে

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুর বক্তব্য সনাতনী সম্প্রদায়ের জন্য একটি নতুন দিশা। এটি আমাদের শেখায় যে, বিভক্তি দূর করে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাঁর বক্তব্য শুধু সনাতনী সম্প্রদায়ের জন্য নয়, বরং সব মানুষের জন্যই প্রাসঙ্গিক।

রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য কেউ যেন মানুষের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করতে না পারে, সেই বিষয়ে সচেতন থাকা আমাদের দায়িত্ব। একমাত্র ঐক্যের মাধ্যমেই আমরা একটি সমৃদ্ধ, সহনশীল ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তুলতে পারি

Leave a Comment