বাংলাদেশ: ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে ভারতীয় হিন্দু ব্যক্তির উপর হামলা ও লুটপাট

বাংলাদেশ: ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে ভারতীয় হিন্দু ব্যক্তির উপর হামলা ও লুটপাট

বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার এক দুঃখজনক ঘটনা ঘটে যখন একজন ভারতীয় হিন্দু নাগরিক সায়ন ঘোষ তাঁর ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে আক্রমণের শিকার হন।

সায়ন ঘোষ কলকাতার বেলঘরিয়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি গত ২৩ নভেম্বর তাঁর বন্ধুর সঙ্গে ঢাকায় ঘুরতে যান। ঢাকায় শপিং করার সময় তিনি ৫-৬ জনের একটি দলের মুখোমুখি হন। তাঁদের সঙ্গে কথোপকথনের সময় সায়ন জানান, তিনি ভারত থেকে এসেছেন এবং তাঁর ধর্ম হিন্দু। এই পরিচয় জানার পর ওই দলটি তাঁর উপর হামলা চালায়।

ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে ভারতীয় হিন্দু ব্যক্তির উপর হামলা ও লুটপাট

সায়ন ঘোষ জানান, তাঁকে একপাশে নিয়ে গিয়ে দলটি তাঁর উপর শারীরিক নির্যাতন চালায়। তাঁর মোবাইল ফোন, টাকা-পয়সা এবং অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী লুট করা হয়। হামলাকারীরা তাঁকে ছুরি দিয়ে মুখে আঘাত করে এবং মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করে। এই হামলার ফলে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন।

হামলার সময় ঘটনাস্থলে অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। তবে, কেউই তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি। বরং হামলাকারীরা তাঁকে বলতে থাকে, “তুমি একজন ভারতীয় হিন্দু। কেন তোমার দেশে ফিরে যাওনি?”

সায়ন ঘোষ জানান, ঢাকার পুলিশ তাঁর কাছ থেকে খুব একটা সহযোগিতা করেনি। এই ঘটনা তাঁকে মানসিক ও শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।

বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা নতুন কিছু নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান সংখ্যালঘুদের ওপর বিভিন্ন ধরনের হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে চলেছে। এই ঘটনাগুলো অনেক সময় স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কারণে আরও ভয়াবহ রূপ নেয়।

সায়নের ঘটনা কেন গুরুত্বপূর্ণ

সায়নের ঘটনা শুধু একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নয়, এটি বৃহত্তর সমস্যার প্রতিফলন। এটি প্রমাণ করে যে, ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে মানুষ কতটা অরক্ষিত হতে পারে। এই ধরনের ঘটনা কেবল ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, এটি একটি সমাজের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সহাবস্থানের ভিত্তিকে দুর্বল করে তোলে।

এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপ। সমাজে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা বাড়াতে শিক্ষার মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও দক্ষ ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে, যাতে সংখ্যালঘুরা নিজেদের নিরাপদ বোধ করতে পারে।

সায়ন ঘোষের অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। এই ধরনের ঘটনা আর কখনো না ঘটে তা নিশ্চিত করতে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

Leave a Comment