সম্প্রতি ভারতের ত্রিপুরা ও আসাম রাজ্যে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ (Illegal infiltration) ব্যাপকভাবে বেড়েছে। দুই দেশের সীমান্তে এই অবৈধ কার্যকলাপ দিন দিন উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ), ত্রিপুরা পুলিশ এবং রেলওয়ে পুলিশ (আরপিএফ ও জিআরপি) একের পর এক অভিযান চালিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের গ্রেপ্তার করছে।
২০২৪ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ত্রিপুরায় মোট ১৪৪৭ জন অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৩৪৬ জন বাংলাদেশি মুসলিম এবং ১০১ জন রোহিঙ্গা মুসলিম।
- আগস্ট মাসে গ্রেপ্তার: ৬২০ বাংলাদেশি মুসলিম এবং ৪৪ রোহিঙ্গা মুসলিম।
- সেপ্টেম্বর মাসে গ্রেপ্তার: ৭২৬ বাংলাদেশি এবং ৫৭ রোহিঙ্গা।
ত্রিপুরা পুলিশের এআইজি অনন্ত দাস জানিয়েছেন, সীমান্তবর্তী এলাকা এবং রেল স্টেশন থেকে এসব অনুপ্রবেশকারীকে আটক করা হয়েছে।
ত্রিপুরা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার কাজ এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। বিএসএফ জানিয়েছে, প্রায় ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হলেও এখনও ২৭.৫ কিলোমিটার অংশে বেড়া নির্মাণের কাজ চলছে। এই ফাঁকা অংশগুলোর কারণেই অনুপ্রবেশকারীরা সহজেই সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকে পড়ছে।
অনুপ্রবেশকারীরা এজেন্টদের সহায়তায় ভারতে প্রবেশ করে। এরপর ত্রিপুরা ও আসামের বিভিন্ন রেল স্টেশন ব্যবহার করে দেশের অন্য প্রান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।
কীভাবে অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে পড়ছে
অনুপ্রবেশকারীদের বড় একটি দল এজেন্টদের মাধ্যমে সীমান্ত পার হচ্ছে। এজেন্টরা তাদের নিরাপত্তা বাহিনীর চোখ এড়িয়ে সীমান্ত পেরোতে সাহায্য করছে। কিছু এলাকায় সীমান্তে বেড়া না থাকা এই প্রবেশের একটি বড় কারণ। অনুপ্রবেশকারীরা রেল স্টেশন, বিশেষ করে আগরতলা ও আসামের কয়েকটি স্টেশনকে ব্যবহার করছে।
ভারত সরকার ও বিএসএফ এই সমস্যা সমাধানে কাজ করছে। বাকি ২৭.৫ কিমি সীমান্তে দ্রুত কাঁটাতারের বেড়ার কাজ শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে সীমান্ত সুরক্ষার ঘাটতি দ্রুত পূরণ না করলে পরিস্থিতি আরো জটিল হতে পারে।
অনুপ্রবেশের প্রভাব
এত বিপুল পরিমাণ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী ভারতে প্রবেশ করলে দেশের নিরাপত্তা এবং সামাজিক কাঠামোতে বড় ধরনের প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা ও সামাজিক ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে।
বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ সীমান্ত এলাকায় একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া সম্পূর্ণ করা এবং অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি। ভারত সরকারের উচিত সীমান্ত এলাকায় আরও কার্যকর নজরদারি বাড়ানো। ত্রিপুরা ও আসামের জনগণের উদ্বেগ দূর করতে দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। শুধুমাত্র সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমেই এই সংকট সমাধান সম্ভব। তথ্যসূত্র: NEH24x7।