সিরাজগঞ্জে মন্দিরে চুরির ঘটনা ২০২৫! তালা ভেঙে স্বর্ণালঙ্কার ও বিগ্রহ চুরি।

সিরাজগঞ্জে মন্দিরে চুরির ঘটনা ২০২৫! তালা ভেঙে স্বর্ণালঙ্কার ও বিগ্রহ চুরি।

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় একটি মন্দিরে তালা ভেঙে স্বর্ণালঙ্কার ও বিগ্রহ চুরির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি ঘটেছে বেলকুচি পৌর শহরের দেলুয়া শ্রী শ্রী রাম কৃষ্ণ সেবাশ্রম মন্দিরে। সোমবার (২৭ জানুয়ারি) রাতের কোনো এক সময়ে এই চুরির ঘটনা ঘটে। চুরির ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।

মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে স্বপন কুমার পোদ্দার জানিয়েছেন, সোমবার রাত ৮টার দিকে ভক্তরা মন্দিরে উপাসনা শেষে তালা দিয়ে বাড়ি ফিরে যান। পরের দিন, মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে মন্দিরের তালা খুলতে গিয়ে দেখা যায়, মন্দিরের উত্তর-পূর্ব কোণের গেটের তালা ভাঙা।

ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, মন্দিরের মূল বিগ্রহের গায়ে থাকা স্বর্ণালঙ্কার চুরি হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রতিমার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিগ্রহ-ও চুরি হয়েছে।

স্বপন কুমার পোদ্দার জানান, চুরির ঘটনায় মন্দিরের মোট ক্ষয়ক্ষতি দেড় লাখ টাকা। স্বর্ণালঙ্কার ছাড়াও বিগ্রহের আর্থিক ও ঐতিহাসিক মূল্য অনেক বেশি। এই ক্ষতি শুধু আর্থিক নয়, এটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ক্ষতিও বটে।

এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া

মন্দিরে চুরির ঘটনায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ক্ষুব্ধ। তারা দ্রুত অপরাধীদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এ ঘটনার পর থেকেই এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে আলোচনা করছে।

অনেকের মতে, এই ঘটনা ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ওপর বড় ধরনের আঘাত। একটি মন্দিরে এমন ঘটনা পুরো সম্প্রদায়ের জন্য অপমানজনক।

বেলকুচি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাকেরিয়া হোসেন জানিয়েছেন, এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে এবং ঘটনার তদন্ত চলছে। ওসি জাকেরিয়া হোসেন আশ্বাস দিয়েছেন যে, দ্রুত দোষীদের খুঁজে বের করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে চুরির প্রভাব

মন্দির বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে চুরির ঘটনা শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি করে না, এটি মানুষের মানসিক শান্তি এবং ধর্মীয় অনুভূতিতেও আঘাত হানে। এমন ঘটনায় মানুষ তাদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে।

ক্ষতির ধরনমোট পরিমাণ (টাকা)
স্বর্ণালঙ্কার১,০০,০০০
বিগ্রহ৫০,০০০
মোট ক্ষতি১,৫০,০০০

চুরির ঘটনা প্রতিরোধে করণীয়

এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে মন্দির কমিটি ও প্রশাসনকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। নিচে কিছু প্রস্তাব দেওয়া হলো:

  1. সিসিটিভি ক্যামেরা: প্রতিটি মন্দিরে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো উচিত।
  2. নাইট গার্ড নিয়োগ: রাতে নিরাপত্তার জন্য গার্ড রাখা প্রয়োজন।
  3. জনসচেতনতা বৃদ্ধি: এলাকার মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
  4. পুলিশি নজরদারি: ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত পুলিশি টহল জোরদার করা উচিত।

প্রশাসনের দায়িত্ব

এ ধরনের ঘটনায় প্রশাসনের দায়িত্ব হলো, দ্রুততম সময়ের মধ্যে অপরাধীদের শনাক্ত করা এবং আইন অনুযায়ী শাস্তি নিশ্চিত করা। প্রশাসনের সঠিক পদক্ষেপ না থাকলে এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটতে পারে।

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার এই চুরির ঘটনা শুধু একটি মন্দিরের সম্পদ ক্ষতি করেনি, এটি পুরো সম্প্রদায়ের ওপর প্রভাব ফেলেছে। প্রশাসনের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া গেলে এলাকার মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে পাবে। ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে প্রশাসন ও স্থানীয় জনগণের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

Leave a Comment