বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন: ব্রিটেনের উদ্বেগ এবং রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন: ব্রিটেনের উদ্বেগ এবং রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

সম্প্রতি বাংলাদেশের (Bangladesh) পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ব্রিটেনের (United Kingdom) পার্লামেন্ট। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর চলমান সহিংসতা ও নির্যাতন বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাজ্যের সংসদে আলোচনা হয়েছে। হাউস অব কমন্সে মঙ্গলবার একটি জরুরি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে চলমান হামলা, সন্ন্যাসীদের ওপর নির্যাতন এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার ক্ষতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এই আলোচনায় শাসক-বিরোধী উভয় পক্ষই নিজেদের অবস্থান জানায় এবং সমস্যাটির গুরুত্ব তুলে ধরে।

ব্রিটেনের লেবার পার্টির এমপি ব্যারি গার্ডিনার এ বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, “বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায় এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর সহিংসতা একটি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন। আমরা দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ এশিয়ার এই অঞ্চলের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি, কিন্তু এখন আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করা উচিত।

এই আলোচনা চলাকালে একাধিক ব্রিটিশ এমপি বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে “উদ্বেগজনক” বলে চিহ্নিত করেন। তারা অভিযোগ করেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে রয়েছে এবং তাদের উপর আক্রমণ ও নির্যাতনের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে, হিন্দু সন্ন্যাসীদের ওপর চলমান নির্যাতন ও তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিপন্ন হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।

ব্রিটিশ এমপিদের প্রতিক্রিয়া

বিরোধী কনসারভেটিভ পার্টির এমপি প্রীতি প্যাটেল বলেন, “বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা একই সঙ্গে নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারকে আরও সক্রিয় হতে হবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “বাংলাদেশের এই সংকট শুধু একটি দেশীয় সমস্যা নয়, এটি একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ইস্যু।

লেবার পার্টির আরেক এমপি উল্লেখ করেন, “বাংলাদেশে মানবাধিকার এবং সুশীল সমাজের সংগঠনগুলি এই বিষয়টি বারবার তুলে ধরলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পর্যাপ্ত পদক্ষেপ এখনো দৃশ্যমান হয়নি।

বব ব্ল্যাকম্যানের উদ্বেগ

ব্রিটিশ এমপি বব ব্ল্যাকম্যান এই আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, “বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায় এখন চরম সহিংসতার শিকার হচ্ছে। তাদের ঘরবাড়ি এবং মন্দিরে আগুন লাগানো হচ্ছে, তাদের জীবনও হুমকির সম্মুখীন।” তিনি এই পরিস্থিতিকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে অভিহিত করেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন।

ব্রিটেনের এমপিরা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাদের মতে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ এবং নির্যাতনের ঘটনায় আরও খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। তারা এও উল্লেখ করেন, “বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের ওপর বড় ধরনের প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

ব্রিটেনের সংসদে আলোচনার সময়, বাংলাদেশের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা নিয়েও আলোচনা করা হয়। এমপিরা বলছেন, ব্রিটেন একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের মানবাধিকার ইস্যুতে আরও সক্রিয় হতে পারে।

ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশ দফতরের একজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন, “আমরা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। এই পরিস্থিতি আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং কূটনৈতিকভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছি।

ব্রিটেনের পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত এই আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরও বেশি আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষত, ধর্মীয় সহিংসতা এবং সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলে আরও আলোচিত হবে এবং বাংলাদেশের সরকারের ওপর চাপ বাড়তে পারে।

এছাড়া, ব্রিটেনের এমপিরা উল্লেখ করেন যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির দিকে নজর দিয়ে মানবাধিকার রক্ষা করতে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

Leave a Comment