বাংলাদেশে বাড়তে থাকা ভারত-বিরোধী এবং হিন্দু-বিরোধী মনোভাবের মাঝে একটি অস্বস্তিকর ঘটনা ঘটেছে। শনিবার, ত্রিপুরা থেকে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা অভিমুখে যাত্রা করা একটি বাস বাংলাদেশে আক্রমণের শিকার হয়। আগরতলা থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে চলমান শ্যামলী পরিবহনের বাসটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশ্ব রোড এলাকায় আক্রমণের মুখে পড়ে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় বাসিন্দারা ভারত-বিরোধী স্লোগান তুলে ভারতীয় যাত্রীদের হুমকি দেয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, শ্যামলী পরিবহনের বাসটি একটি পণ্যবাহী ট্রাকের আঘাতে দুর্ঘটনার শিকার হয়। ট্রাকটি বাসের পেছনে ধাক্কা দিলে সেটি একটি অটো-রিকশার সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে ভারত-বিরোধী স্লোগান দিতে শুরু করে।
বাসের যাত্রীদের অভিযোগ, এটি ছিল একটি পূর্বপরিকল্পিত হামলা। যাত্রীরা জানান, পণ্যবাহী ট্রাকটি ইচ্ছাকৃতভাবে বাসের পেছনে আঘাত করে দুর্ঘটনার সৃষ্টি করে। এরপর স্থানীয় বাসিন্দারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভারতীয় যাত্রীদের উদ্দেশ্যে কটূক্তি এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
একজন যাত্রী বলেন, “এটি স্রেফ একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং আমাদের ভয় দেখানোর একটি পরিকল্পিত চক্রান্ত। ট্রাকটি ইচ্ছাকৃতভাবে বাসটিকে আঘাত করেছে।” যাত্রীরা আরও বলেন, তারা এই ঘটনার কারণে চরম ভীত হয়ে পড়েন।
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রতি ভারতের ঐতিহাসিক অবদান এবং বিশেষত ত্রিপুরার সহযোগিতার কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত ও ত্রিপুরার অবদান তারা ভুলে যেতে পারে না। এই ধরনের ঘটনা আমাদের দুই দেশের সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।”
ত্রিপুরার পরিবহন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী এই ঘটনাকে ‘ইচ্ছাকৃত’ বলে উল্লেখ করেন। ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, “শ্যামলী পরিবহনের বাসটি যখন বিশ্ব রোড এলাকায় যাত্রা করছিল, তখন একটি ট্রাক পেছন থেকে আঘাত করে। এর ফলে একটি অটো রিকশার সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। তারপর স্থানীয় লোকজন বাসটিকে ঘিরে ধরে ভারত-বিরোধী স্লোগান দিতে থাকে এবং ভারতীয় যাত্রীদের হুমকি দেয়।”
মন্ত্রী আরও বলেন, “এই ঘটনায় ভারতীয় যাত্রীরা চরম আতঙ্কের মধ্যে পড়ে। এটি একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশের প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানাই।”
এই ঘটনা দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের ওপর একটি নেতিবাচক ছায়া ফেলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন ঘটনাগুলো বন্ধ করতে হলে দুই দেশের সরকারকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ভারতীয় যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাংলাদেশের কর্তব্য, যা এই ঘটনায় প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এই ধরনের ঘটনা শুধুমাত্র দুই দেশের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্তই করবে না, বরং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
ত্রিপুরা সরকার এবং ভারতের অন্যান্য প্রশাসনিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশ সরকারের প্রতি এই বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ঘটনাটি থেকে শিক্ষা নিয়ে দুই দেশকে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। যাত্রীদের নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় যৌথ প্রচেষ্টা এখন সময়ের দাবি।