বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সনাতনীদের উপর হামলা এবং ভারত সরকারের উদ্বেগ!

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সনাতনীদের উপর হামলা এবং ভারত সরকারের উদ্বেগ!

সম্প্রতি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর একের পর এক হামলার খবর উঠে এসেছে। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বাংলাদেশ সরকারকে ওই হামলাগুলোর প্রতি গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর মতে, বাংলাদেশ সরকারেরই দায়িত্ব, সেখানে বসবাসরত সব নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। ভারত সরকারের এই উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারকে বিষয়টি নিয়ে আরও সতর্ক থাকতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।

আগস্ট ২০২৪ সালের ঘটনাগুলোতে, বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বী সহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলার লক্ষ্য ছিল হিন্দুদের ঘর-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং উপাসনালয়। এসব ঘটনায় অস্থিরতা ও সহিংসতা বাড়তে থাকে, যার ফলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে।

এছাড়া, দুর্গা পূজার সময়েও হামলার ঘটনা ঘটে। ঢাকার তান্তিবাজারে এক পূজা মণ্ডপে হামলা এবং সাতক্ষীরার জেশোশ্বরী কালি মন্দিরে চুরি সংঘটিত হয়। এসব হামলা দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

ভারত সরকার এসব হামলার প্রতিবাদ জানায় এবং বাংলাদেশ সরকারকে তাদের উদ্বেগের বিষয়টি অবহিত করে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী স. জয়শঙ্কর সংসদে এক বিবৃতিতে জানান যে, ভারত সরকার এই ঘটনার প্রতি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং এটি বাংলাদেশের সরকারের কাছে উত্থাপন করা হয়েছে।

ভারত সরকারের অবস্থান

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা নিয়ে সরকার খুবই উদ্বিগ্ন। ভারত সরকার এসব ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।” তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে তার দেশের সকল নাগরিকের জীবন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যার মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ও রয়েছে।

ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এই সহিংসতার ঘটনার ব্যাপারে বারবার উদ্বেগ জানানো হয়েছে এবং ভারতের হাইকমিশন ঢাকায় পরিস্থিতি মনিটর করছে।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। তারা জানান, দুর্গা পূজার সময়ে ওই হামলাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসেবে সেনা বাহিনী ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হয়। বাংলাদেশ সরকার আশ্বাস দিয়েছে যে, তারা সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

এছাড়া, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা সবার জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তারা সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

ভারতের উদ্বেগ এবং আহ্বান

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল বলেছেন, “আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে বারবার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছি। বাংলাদেশ সরকারকে এখন তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, “আমরা উদ্বিগ্ন যে, কিছু গোত্রের উস্কানিমূলক বক্তব্য ও সহিংসতার ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে, যা গণমাধ্যমের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। এসব ঘটনা উপেক্ষা করা যাবে না।

এছাড়া, তিনি বাংলাদেশ সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমরা আবারও অনুরোধ জানাচ্ছি যে, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুক।

বাংলাদেশে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনা চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা বজায় রাখতে এবং সমাজে শান্তি স্থাপন করতে বাংলাদেশ সরকারের কার্যকর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার পাশাপাশি ধর্মীয় সহিংসতা বাড়ার ফলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিরাপত্তাহীনতায় পড়তে হচ্ছে। এমনকি, স্থানীয় পর্যায়ে কিছু গোষ্ঠী উস্কানি দিয়ে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, বাংলাদেশ সরকারকে এখন নিজ দেশের সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে, পাশাপাশি মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে হবে।

ভারতের অবস্থান স্পষ্ট। ভারত সরকার বারবার বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। তারা মনে করে, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের প্রতি প্রতিটি হামলা, অত্যাচার বা নির্যাতন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুনির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশ সরকারকে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে এবং সাম্প্রদায়িক হানাহানি প্রতিরোধ করতে তাগিদ দিয়েছে।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা এবং তাদের নিরাপত্তার সংকট একটি গুরুতর সমস্যা। এই সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য বাংলাদেশের সরকারের শক্ত অবস্থান এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। ভারত সরকারও তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বাংলাদেশকে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আহ্বান জানিয়েছে।

এমনকি, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে, ভারতীয় সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মনে করে যে, এই সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। তথ্যসূত্র: OPIndia.

Leave a Comment